বাংলাদেশসহ তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশেই গণতন্ত্রের সঠিক চর্চার অভাব লক্ষ্য করা যায়। সংবিধানের মূলনীতিগুলো নিয়ে বিতর্ক ১৯৭১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত চলছে। সংবিধান সংস্কার কমিটি সম্প্রতি তিনটি পুরনো মূলনীতি বাদ দিয়ে গণতন্ত্রকে একমাত্র মূলনীতি হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দিয়েছে। যদিও এ প্রস্তাবকে ঘিরে কিছু সমালোচনা আছে, তবে এটি প্রমাণ করে যে গণতন্ত্রে আমাদের ‘এলার্জি’ নেই।
গণতন্ত্র নিজেই একটি সর্বজনীন এবং যথেষ্ট নীতি। এর মধ্যেই রয়েছে আইনের শাসন, ন্যায়বিচার, ধর্মনিরপেক্ষতা, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার মতো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। গণতন্ত্র এমন একটি ব্যবস্থা, যেখানে জনগণের ইচ্ছা এবং অংশগ্রহণের ভিত্তিতে শাসন কার্যকর হয়। এটি বৈষম্য দূর করার পাশাপাশি সমাজে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করে। উদাহরণস্বরূপ, ভারতের নিয়মিত নির্বাচন গণতন্ত্রের সঠিক চর্চার একটি দৃষ্টান্ত।
অন্যদিকে, স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোতে জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ এবং জবাবদিহিমূলক রাখা হয়। এমন একটি অংশগ্রহণমূলক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা আমাদের দেশের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্রের উদাহরণ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স প্রমাণ করেছে যে ধর্ম, সংস্কৃতি কিংবা গোষ্ঠীগত মতাদর্শের ঊর্ধ্বে গণতন্ত্র কাজ করে।
গণতন্ত্র কেবল একটি তত্ত্ব নয়, বরং এটি একটি শাসনব্যবস্থা, যা জনগণের শাসন নিশ্চিত করে। এটি সামাজিক ন্যায়বিচারের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকেও সম্মান জানায়। উদাহরণস্বরূপ, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং কানাডার মতো দেশগুলোতে বিভিন্ন জাতি ও সংস্কৃতির মানুষের অধিকার গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সুরক্ষিত করা হয়েছে।
তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে গণতন্ত্রের সঠিক চর্চা এখনো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। রাজনৈতিক দলগুলোর অপব্যাখ্যা ও স্বার্থপরতা গণতন্ত্রের প্রকৃত অর্থকে নষ্ট করেছে। গণতন্ত্রকে যদি সঠিকভাবে প্রয়োগ করা যায়, তবে এটি একক নীতিমালার মাধ্যমেই জাতির কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে যথেষ্ট হতে পারে। তাই প্রয়োজন শিক্ষার মাধ্যমে একটি সচেতন প্রজন্ম তৈরি করা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর নৈতিক মূল্যবোধ জাগ্রত করা।