বাংলাদেশে দুর্নীতির ২৮ পদ্ধতি: শ্বেতপত্র কমিটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন

শ্বেতপত্র কমিটির চূড়ান্ত প্রতিবেদনে আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে দুর্নীতির বিভিন্ন পদ্ধতির তালিকা তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ পদ্ধতিগুলো দেশব্যাপী বিভিন্ন খাতের অপচয় এবং আর্থিক অপব্যবস্থা সৃষ্টি করেছে। নিচে এ পদ্ধতিগুলো দেওয়া হলো:

১. ব্যাংক খাতের ঋণ কেলেঙ্কারি
প্রতারণাপূর্ণ ব্যাংকঋণ এবং ঋণের অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ব্যাপকভাবে ছড়িয়েছে।

২. ব্যাংক অধিগ্রহণ
জোরপূর্বক ব্যাংকের মালিকানা দখল করা হয়েছে, যেখানে রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলো সহায়তা করেছে।

৩. অবৈধ অর্থ পাচার
বেআইনিভাবে উপার্জিত অর্থ বিপুল পরিমাণে বিদেশে পাচার করা হয়েছে।

৪. অলাভজনক প্রকল্পে বিনিয়োগ
লাভজনক নয় এমন প্রকল্পে অপ্রয়োজনীয় অর্থ অপচয় করা হয়েছে, যা মূল্যস্ফীতি বাড়িয়েছে।

৫. প্রকল্পের খরচ বৃদ্ধি
প্রকল্পের খরচ ইচ্ছাকৃতভাবে বাড়ানো হয়েছে অর্থ চুরির জন্য।

৬. প্রকল্প অনুমোদনের পর ব্যয় বৃদ্ধি
অনুমোদিত প্রকল্পে কৃত্রিমভাবে ব্যয় বাড়িয়ে তহবিল থেকে অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে।

৭. প্রতিযোগিতাবিহীন দরপত্র প্রক্রিয়া
সরকারি কেনাকাটায় স্বজনতোষী সুবিধাভোগীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে, যা যোগ্য সরবরাহকারীদের বঞ্চিত করেছে।

৮. অপ্রয়োজনীয় দুর্বল প্রকল্প গ্রহণ
যথাযথ সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়াই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, যা সম্পদের অপচয়ের কারণ হয়েছে।

৯. নিয়োগে স্বজনপ্রীতি
প্রকল্প পরিচালনায় নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক যোগাযোগকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, মেধাকে উপেক্ষা করা হয়েছে।

১০. ভূমি সম্পদের অবৈধ অধিগ্রহণ
বেআইনিভাবে ভূমি ও সম্পদ দখল করা হয়েছে।

১১. ভূমি অধিগ্রহণের অর্থের অপব্যবহার
রাজনৈতিকভাবে দুর্বল ভূমিমালিকদের অসম চুক্তিতে বাধ্য করা হয়েছে এবং অধিগ্রহণের অর্থ অপব্যবহার করা হয়েছে।

১২. চুক্তিমূল্য বাড়িয়ে কাজ প্রদান
রাজনৈতিক সংযোগ থাকা ঠিকাদারদের চুক্তির মূল্য কৃত্রিমভাবে বাড়ানো হয়েছে।

১৩. প্রকল্প সম্পদের অপব্যবহার
যানবাহন, ভ্রমণ বাজেট এবং অন্যান্য প্রকল্প সম্পদ রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত সুবিধার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে।

১৪. ঘুষকে মানদণ্ড হিসেবে ব্যবহার
কাজ দ্রুত করানো এবং বিশেষ সুবিধা নিতে নিয়মিতভাবে ঘুষের লেনদেন করা হয়েছে।

১৫. রাষ্ট্রীয় তহবিলের অপব্যবহার
উন্নয়ন তহবিলকে রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়েছে।

১৬. অভিজাতদের কর অব্যাহতি
কর নীতিকে প্রভাবশালীদের সুবিধা দিতে ব্যবহার করা হয়েছে।

১৭. সরবরাহ চেইনের বিকৃতি
সরবরাহ ব্যবস্থাকে অপব্যবহার করে বাজারে অদক্ষতা ও পণ্যমূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে।

১৮. গোপন তথ্য ফাঁস
নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে নীতিগত সিদ্ধান্তের ভেতরের তথ্য জানিয়ে আর্থিকভাবে সুবিধা দেওয়া হয়েছে।

১৯. সংঘবদ্ধ দুর্নীতি
সরকারি কর্মকর্তা ও বেসরকারি ব্যক্তিরা আঁতাত করে পারস্পরিক সুবিধা নিয়েছেন।

২০. চাঁদাবাজিভিত্তিক দুর্নীতি
ঘুষ আদায়ে চাপ প্রয়োগ ও অন্যায্য লেনদেনের মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে।

২১. একচেটিয়া ব্যবস্থার মাধ্যমে দুর্নীতি
বাজার পরিস্থিতি এমনভাবে পরিচালিত হয়েছে, যাতে বিশেষ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান লাভবান হয়।

২২. অগ্রিম তথ্যের অপব্যবহার
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আগেই ফাঁস করে বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দেওয়া হয়েছে।

২৩. তথ্য গোপন করা
অংশীজনদের বিভ্রান্ত করতে প্রয়োজনীয় তথ্য গোপন রাখা হয়েছে।

২৪. ইচ্ছাকৃত দেরি করে দুর্নীতি
ঘুষ নেওয়ার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে কাজ বিলম্বিত করা হয়েছে।

২৫. পদোন্নতির জন্য ঘুষ
চাকরির পদোন্নতির ক্ষেত্রে ঘুষ ও রাজনৈতিক যোগাযোগকে ব্যবহার করা হয়েছে।

২৬. কমিশনের ভাগ-বাঁটোয়ারা
অনুমোদনের ক্ষেত্রে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা কমিশনের অংশ দাবি করেছেন।

২৭ রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়া
রাজনৈতিক আনুগত্য ও সুবিধার জন্য সম্পদ এবং সিদ্ধান্ত কাজে লাগানো হয়েছে।

২৮ আইন প্রণয়নে দুর্নীতি
আইন ও নীতি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যা স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীকে সুবিধা দিয়েছে।

দুর্নীতিগ্রস্ত খাত

শ্বেতপত্র কমিটির প্রতিবেদন অনুসারে, দুর্নীতির কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ব্যাংক খাত। ভৌত অবকাঠামো এবং জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) খাতেও বড় ধরনের দুর্নীতি হয়েছে।

এ প্রতিবেদন দুর্নীতির ভয়াবহতা এবং অর্থনৈতিক অপব্যবস্থার গভীরতাকে তুলে ধরেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *