তাসনিয়া স্যমূম এর New Age এ প্রকাশিত একটি লেখা থেকে নেয়া
বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে সবচেয়ে কার্যকর প্রতিরক্ষা হলো জনগণের রাজনৈতিক সচেতনতা। স্বৈরশাসকেরা জানে, জ্ঞানী ও সচেতন নাগরিক তাদের ক্ষমতার জন্য হুমকি—তাই শিক্ষা ব্যবস্থাকে বিকৃত বা শূন্য করে রাজনৈতিক জ্ঞান দমন করা হয়। শেখ হাসিনার শাসনামলে পাঠ্যক্রম থেকে নাগরিক শিক্ষা বাদ দিয়ে তুচ্ছ বিষয় যেমন বিছানা গোছানো বা আলু ভর্তা তৈরির মতো বিষয় যুক্ত করা হয়েছিল—যা সমালোচনামূলক চিন্তাশক্তি কমানোর সচেতন প্রয়াস।
দুঃখজনকভাবে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও শিক্ষায় রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়নি। এটি একটি বিপজ্জনক নীরবতা, কারণ ইতিহাস প্রমাণ করেছে—আইন বদল বা সংবিধান সংশোধন একা স্বৈরতন্ত্র ঠেকাতে পারে না। টেকসই প্রতিরক্ষা আসে সচেতন জনগণ গড়ে তোলার মাধ্যমে। রাজনৈতিক শিক্ষা ও সচেতনতা ছাড়া নাগরিকরা ক্ষমতাসীনদের জবাবদিহি করাতে সক্ষম হয় না।
নাগরিক শিক্ষা প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত বাধ্যতামূলক করতে হবে—সাধারণ ও মাদ্রাসা উভয় ধারায়। প্রতিটি শ্রেণিতে এমন কোর্স থাকতে হবে যা সরকারের কার্যপ্রণালী, নাগরিক অধিকার ও তা রক্ষার উপায় শেখাবে। হাতে-কলমে শেখানোর জন্য মক নির্বাচন, ছাত্র সংসদ, এবং স্থানীয় সরকার সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের মতো কার্যক্রম চালু করতে হবে, যাতে শিক্ষার্থীরা শিখতে পারে যে রাজনীতি দূরের কিছু নয়—তাদের নিজের অংশগ্রহণেই তা গড়ে ওঠে।
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে নাগরিক শিক্ষা মূল পাঠ্যক্রমের অংশ হতে হবে, যাতে ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব গড়ে ওঠে যারা ক্ষমতা বোঝে এবং তা চ্যালেঞ্জ করার দক্ষতা রাখে। রাজনৈতিক শিক্ষা ছাড়া দক্ষ পেশাজীবী তৈরি হলেও তারা গণতন্ত্র রক্ষায় অক্ষম থাকবে।
আগামী নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোকে নাগরিক শিক্ষা পুনঃপ্রবর্তন ও উন্নয়নের সুস্পষ্ট পরিকল্পনা দিতে হবে, এটিকে স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির পাশাপাশি জাতীয় অগ্রাধিকারে রাখতে হবে। কারণ সচেতন নাগরিকই পারে অন্যায়, অবিচার ও স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে, গণতন্ত্রকে সুরক্ষিত রাখতে, এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম স্বাধীনতার মান রক্ষা করতে।