মানব সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকেই প্রকৃতি, বর্ণ, লিঙ্গ এবং শক্তি, বিদ্যা ও সম্পদের বৈষম্যের কারণে মানুষে মানুষে বিভেদ তৈরি হয়েছে। তবে, সেই বিভেদের মধ্যেও মানুষ তার জ্ঞান-বুদ্ধি ও দর্শনের মাধ্যমে ঐক্যের পথ খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা মানবজাতিকে গভীরভাবে নাড়া দেয়। সেই সময়ের শিক্ষা থেকে নির্যাতন ও উৎপীড়নের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়। এরই ফলস্বরূপ জাতিসংঘের উদ্যোগে ১৯৪৮ সালে সর্বজনীন মানবাধিকার সনদ গৃহীত হয়। এটি বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী ও স্থায়ী আন্তর্জাতিক দলিল, যা আজও আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক এবং জাতীয় পর্যায়ে উল্লেখযোগ্য প্রভাব বিস্তার করছে।
বাংলাদেশের সংবিধান ও মানবাধিকার
বাংলাদেশের সংবিধান মানবাধিকারের মূলনীতিগুলোকে মৌলিক অধিকার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এই মৌলিক অধিকারগুলোর মধ্যে রয়েছে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য। এছাড়াও রয়েছে বাঁচার অধিকার, মত প্রকাশের অধিকার, ধর্মচর্চার অধিকার এবং ন্যায়বিচারের অধিকার। তবে বাস্তবে অনেক ক্ষেত্রেই মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিভিন্ন রূপ
মানবাধিকার লঙ্ঘন শুধুমাত্র ব্যক্তিগত পর্যায়ে ঘটে না, বরং এটি পারিবারিক, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও ঘটে। উদাহরণস্বরূপ, একটি কন্যাশিশুকে তার শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করে অল্প বয়সে বিয়ের চাপ দেওয়া হলে তার মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়। একইভাবে, রাস্তার নিরাপত্তার অভাবে স্কুলগামী কিশোরী লিপির পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেলে সেটিও মানবাধিকার লঙ্ঘন।
মানবাধিকার রক্ষায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ
বাংলাদেশে মানবাধিকার সুরক্ষায় সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৭ থেকে ৪৪ পর্যন্ত মৌলিক অধিকারগুলো উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হলে রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন এবং জনগণের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। বিশেষ করে সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। মাদক সন্ত্রাস রোধে শুধু আইন প্রণয়ন যথেষ্ট নয়, বরং এর বাস্তব প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে নিরপরাধ মানুষ যেন আইনি প্রক্রিয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকেও নজর দিতে হবে।
উপসংহার
মানবাধিকার মানুষের সহজাত অধিকার এবং এটি কোনোভাবেই হরণযোগ্য নয়। এটি মানুষের ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য অপরিহার্য। পারিবারিক, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে এই অধিকার প্রতিষ্ঠায় সচেতনতা, আইন প্রয়োগ এবং সঠিক উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে একটি ন্যায়ভিত্তিক ও শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠন সম্ভব।