বাংলাদেশে মুদ্রাস্ফীতি একটি দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা হিসেবে দাঁড়িয়েছে। গত দুই বছর ধরে মুদ্রাস্ফীতির হার প্রায় দুই অঙ্কের কাছাকাছি, যা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়িয়ে দিয়েছে। এ সমস্যা মোকাবিলায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নির্ধারিত ১২টি পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করতে হবে।
১. অর্থনৈতিক নীতির সমন্বয়
অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য আর্থিক ও রাজস্ব নীতির মধ্যে সমন্বয় প্রয়োজন। শুধুমাত্র কঠোর আর্থিক নীতির ওপর নির্ভর না করে সরকারকে খরচ নিয়ন্ত্রণ ও বাজেট ঘাটতি হ্রাসে পদক্ষেপ নিতে হবে।
২. আমদানি শুল্ক হ্রাস
আমদানিকৃত পণ্যের ওপর উচ্চ কর কমাতে হবে। এটি সাধারণ মানুষের ব্যয় হ্রাস করবে এবং বাজারে পণ্যের দাম কমাতে সাহায্য করবে।
৩. সরকারি ব্যয়ের মান উন্নয়ন
সরকারি ব্যয়কে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য খাদ্য সহায়তা প্রদানের দিকে মনোযোগী করতে হবে। এর পাশাপাশি জ্বালানি ভর্তুকি পুনর্বিন্যাস করাও গুরুত্বপূর্ণ।
৪. বৈদেশিক মুদ্রার স্থিতিশীলতা
টাকার মান স্থিতিশীল রাখতে রপ্তানি আয় বাড়াতে এবং পুঁজি পাচার বন্ধ করতে হবে। এটি আমদানি ব্যয় কমিয়ে মুদ্রাস্ফীতির চাপ হ্রাস করবে।
৫. খাদ্য বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়ন
ওএমএস এবং খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
৬. মূল্য নির্ধারণে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা
বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনকে সক্রিয়ভাবে কাজ করে পণ্যের দামের কারসাজি বন্ধ করতে হবে এবং বাজারে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে।
৭. কৃষি উৎপাদন বাড়ানো
আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি এবং পরবর্তী ক্ষতি হ্রাসে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
৮. সরবরাহ শৃঙ্খল উন্নয়ন
পরিবহন অবকাঠামোতে বিনিয়োগ বাড়িয়ে সরবরাহ ব্যবস্থা উন্নত করা প্রয়োজন। এটি পণ্য সরবরাহ সহজতর করে মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস করবে।
৯. বাণিজ্যিক অংশীদারিত্ব সম্প্রসারণ
জরুরি পণ্য আমদানির জন্য বাণিজ্যিক অংশীদারিত্ব সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন। এটি আকস্মিক বাজার সংকট রোধে সহায়ক হবে।
১০. কৃষকদের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা
সরকারের পক্ষ থেকে কৃষকদের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্যে পণ্য সংগ্রহের ব্যবস্থা করতে হবে। এটি বাজারে ভারসাম্য আনতে সহায়ক হবে।
১১. কৃষক ও বাজারের সংযোগ বৃদ্ধি
মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব কমাতে কৃষকদের সরাসরি বাজারের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
১২. ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের ব্যবহার
কৃষকদের ই-কমার্স এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সংযুক্ত করতে হবে, যা মধ্যস্বত্বভোগীদের বাদ দিয়ে সরাসরি ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ দেবে।
এই পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন করতে সরকারি ও বেসরকারি অংশীদারিত্ব এবং সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।