সম্প্রতি বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী “অপারেশন ডেভিল হান্ট” নামে এক বিশেষ অভিযান শুরু করেছে, যার উদ্দেশ্য সমাজের নানা অশুভ কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত ‘শয়তান’দের ধরতে অভিযান চালানো। বিশেষ এই অভিযান অনেকের মনে স্বস্তি তৈরি করেছে, তবে এর পেছনে রয়েছে গভীর প্রশ্ন। গাজীপুরে ছাত্র-জনতার ওপর পরিকল্পিত হামলার পর এই অভিযান শুরু হওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বস্তি দেখা গেলেও, এর কূটনৈতিক এবং আইনগত তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা চলছেই।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন অস্থির। ৫ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী সময়ে দেশে যে নৈরাজ্য শুরু হয়েছিল, তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছে। এই সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের নেতাদের বাড়িঘরের ওপর হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ হয়েছে, আর এসব ঘটনা ঘটেছে যখন সেনাবাহিনী এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঠে ছিল। সরকার, গোয়েন্দা সংস্থা এবং অন্যান্য বাহিনী কেন আগে থেকে এসব ঘটনার বিষয়ে সতর্ক ছিল না, তা বড় প্রশ্নের বিষয়।
শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যক্রম এবং তার বিরুদ্ধে জনগণের ক্রোধের যৌক্তিকতা একদিকে যেমন গভীর, অন্যদিকে তার পালিয়ে যাওয়ার পরও তার দলের লোকজন বাংলাদেশের মধ্যে অরাজকতা সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছে। এর পেছনে ষড়যন্ত্র এবং চক্রান্তের প্রমাণ মিলেছে। আর এই পরিস্থিতি তৈরিতে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ব্যর্থতা নিয়ে জনগণের মধ্যে অনেক অসন্তোষ রয়েছে।
“অপারেশন ডেভিল হান্ট”-এর মাধ্যমে সরকারের যে অভিযান চলছে, তা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন যে, এতদিন কেন এমন শয়তানদের ধরতে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এর মাধ্যমে কি সরকার মিথ্যে ঘোষণা দিয়ে সাধারণ জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে? এর আগে ‘মাদকবিরোধী অভিযান’ নামে রেবের যে অভিযান ছিল, তাতে অনেক বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল। এই অভিযানের মতো বিশেষ পদক্ষেপগুলি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, বিশেষ করে যখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংস্কৃতিতে নির্যাতন এবং মিথ্যা মামলার ঘটনা ঘটতে থাকে।
বিশেষ অভিযানের পরিবর্তে, সরকারের উচিত হবে প্রতিদিনের কাজকর্মে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার ওপর জোর দেওয়া। জনগণের মধ্যে যদি সরকার প্রতি সমর্থন ব্যর্থ হয় এবং তার উপর একের পর এক অপরাধ ঘটে, তাহলে সরকারের দায়িত্বের প্রতি জনগণের আস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হবে । সরকারকে মনে রাখতে হবে, এক বা দুই মাসের অজুহাত জনগণ গ্রহণ করতে পারে, কিন্তু ছয় মাস পরেও একই রকম দুর্বলতা দেখা দিলে সেটা একেবারে গ্রহণযোগ্য হবে না।