সরকার চালায় মন্ত্রিসভা না প্রধানমন্ত্রী?

আমাদের দেশের সংবিধানে বলা আছে, সরকার চালাবে একটি মন্ত্রিসভা—যার নেতৃত্বে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী। অর্থাৎ, বিভিন্ন মন্ত্রীদের নিয়ে গঠিত এই মন্ত্রিসভা মিলেই দেশ চালানোর সিদ্ধান্ত নেবে। সবাই মিলে কথা বলবে, মতামত দেবে, এবং সিদ্ধান্ত নেবে। এই ব্যবস্থাকে বলা হয় মন্ত্রিসভাভিত্তিক সরকার

কিন্তু বাস্তবে কী আমরা তা দেখতে পাই?

বাস্তবতা হচ্ছে—বাংলাদেশে এখন প্রধানত একটি প্রধানমন্ত্রীশাসিত সরকার চলছে। অর্থাৎ, দেশের সব বড় সিদ্ধান্ত, গুরুত্বপূর্ণ কাজ বা নীতিমালা আসে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকেই। অন্য মন্ত্রীরা অনেক সময় শুধু সেই সিদ্ধান্তে সই করেন বা বাস্তবায়ন করেন। তারা নিজেরা স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না বা অনেক ক্ষেত্রে মুখ খুলতেও পারেন না।

আমাদের সংবিধান বলেছে, প্রধানমন্ত্রী হবেন “প্রথম среди সমানদের”—মানে, মন্ত্রিসভায় সবাই সমান, শুধু প্রধানমন্ত্রী একটু আগে বসেন। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রীর কথা চূড়ান্ত। এমনকি সংসদ সদস্যরাও প্রধানমন্ত্রীকে না জানিয়েই কথা বলার সাহস পান না।

এভাবে একজন মানুষের ওপর এত ক্ষমতা কেমন? অনেকেই বলেন এতে কাজ দ্রুত হয়, সিদ্ধান্ত নিতে সময় লাগে না। কিন্তু বড় সমস্যা হচ্ছে, ভুল সিদ্ধান্ত হলেও সেটা কেউ চ্যালেঞ্জ করতে পারে না। আবার সব সময় একজন মানুষ ঠিক ভাবতে পারবেন—এমন নিশ্চয়তাও নেই। এই কারণে গণতন্ত্রে সব সময় চায় যেন সবাই মিলে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

মন্ত্রিসভার মূল উদ্দেশ্যই ছিল—যেন একজন মানুষের হাতে সব ক্ষমতা না থাকে। কিন্তু এখন যা চলছে, তাতে অনেকেই বলছেন—আমাদের দেশে সরকার মানেই একজন মানুষ, বাকিরা শুধু আনুষ্ঠানিকতা পালন করেন।

এই ব্যবস্থা বদলাতে হলে দরকার—সব মন্ত্রী যেন তাদের কাজ স্বাধীনভাবে করতে পারেন, সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেয়, আর সংসদ যেন সরকারকে জবাবদিহি করাতে পারে।

সংক্ষেপে বলতে গেলে, আমাদের সংবিধানে যেমন লেখা আছে, বাস্তবে তেমনটা নেই। আর এই পার্থক্যটাই আমাদের গণতন্ত্রের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। ২৪ আন্দোলনের পর এই ব্যবস্থার পরিবর্তনের চেস্টা করছে যাতে ভবিশ্যত্বে কোন একক ব্যক্তি সৈরাচার না হয়ে উঠে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *