মূল প্রবন্ধ: খলিলউল্লাহ্ প্রথম আলোর
বাংলাদেশে মক্কেলতন্ত্রের উৎপত্তি ও রাজনৈতিক স্থবিরতার কারণ
বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে উন্নতি করলেও রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তন হয়নি—যা ‘বাংলাদেশ প্যারাডক্স’ নামে পরিচিত। গবেষণায় দেখা যায়, দেশে অর্থনৈতিক সম্পর্ক অনেকাংশে ব্যক্তিগত ও পারস্পরিক চুক্তিভিত্তিক, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি টিকিয়ে রাখলেও রাজনৈতিক আধুনিকায়নে সহায়ক হয়নি।
কর্মসংস্থানের সংকট ও অনানুষ্ঠানিক খাত
দেশে প্রাতিষ্ঠানিক চাকরির অভাব ও ৮৫% শ্রমশক্তির অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থান মানুষকে প্রভাবশালী ব্যক্তির ওপর নির্ভরশীল করে তুলেছে। এ খাতে কাজের নিশ্চয়তা, সামাজিক সুরক্ষা ও সরকারি সুবিধা নেই; কাজ পাওয়া অনেকাংশে ব্যক্তিগত সম্পর্কের ওপর নির্ভর করে। এই পরিস্থিতি প্রভাবশালী রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ব্যক্তিদের পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে ‘মক্কেলতন্ত্র’ সৃষ্টি করে, যেখানে আনুগত্যের বিনিময়ে কর্মসংস্থান ও সুবিধা দেওয়া হয়।
দুর্বল রাষ্ট্র ও শক্তিশালী সমাজ
আইনের শাসনের অভাব ও মৌলিক সেবায় ব্যর্থতা রাষ্ট্রকে দুর্বল করেছে। নাগরিকদের সরকারি সেবা, চিকিৎসা বা ন্যায়বিচার পেতে ক্ষমতাসীনদের দ্বারস্থ হতে হয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জুয়েল মিগডালের মতে, বাংলাদেশে সমাজ রাষ্ট্রের চেয়ে শক্তিশালী। দুর্বল রাষ্ট্র সহিংসতার ওপর বেশি নির্ভরশীল হয়, যা দীর্ঘমেয়াদে রাজনৈতিক সংস্কারকে বাধাগ্রস্ত করে।
কর ও আইন মান্যতার অভাব
বাংলাদেশে কর-জিডিপি অনুপাত বিশ্বের অন্যতম সর্বনিম্ন। করদাতারা সরকারি সেবার সুফল না পাওয়ায় কর প্রদানে অনুপ্রাণিত হন না। একইভাবে স্বেচ্ছায় আইন মানার প্রবণতাও দুর্বল; কোভিড-১৯ কালে স্বাস্থ্যবিধি টিকিয়ে রাখতে সরকার ব্যর্থ হয়েছিল।
সমাধানের পথ
রাজনৈতিক সংস্কৃতি বদলাতে হলে জনগণকে সক্রিয় নাগরিকে পরিণত করা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে মৌলিক চাহিদা পূরণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি। তাৎক্ষণিকভাবে প্রাতিষ্ঠানিক কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, অনানুষ্ঠানিক খাতকে নিয়মতান্ত্রিক সুরক্ষা দেওয়া এবং রাষ্ট্রের প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন।
মূল রচনার জন্য এখানে ক্লিক করুন