আমাদের প্রশাসনিক কর্মকর্তারা নিজেদের এক ধরনের “কুলীন শ্রেণি” হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তাঁদের মধ্যে অনেকে কাজের সহজতাকে জটিলতায় পরিণত করেন, যেন নিজেদের ব্যস্ততা প্রদর্শনের সুযোগ পান। সরকারি কাজে দাপ্তরিক জটিলতার উদাহরণ হিসেবে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো, গুরুত্বপূর্ণ একটি ফাইলের বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলার পরও, সেটি নিখোঁজ হয়ে যায় এবং পরে পিয়নকে টাকা দিয়ে তা উদ্ধার করতে হয়। ডিজিটাল যুগে কার্যক্রম সহজ করার সুযোগ থাকলেও, ম্যানুয়াল পদ্ধতি আর অপ্রয়োজনীয় পদক্ষেপের কারণে কাজের গতি শ্লথ হয়ে থাকে।
সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য জীবনযাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ পে স্কেল থাকাটা যুক্তিযুক্ত হলেও, অযৌক্তিক সুবিধার সমালোচনা করা প্রয়োজন। ২০১৫ সালের পর থেকে নতুন পে কমিশন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েও মূল্যস্ফীতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে ব্যর্থতা দেখা যাচ্ছে। উপরন্তু, প্রশাসনিক ব্যবস্থার মাথাভারী অবস্থা, পদোন্নতির জন্য মেধার চেয়ে কোটা ব্যবস্থার প্রাধান্য, এবং নিজেদের সুবিধা অক্ষুণ্ন রাখার প্রবণতা প্রশাসন সংস্কারের পথে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ পরিস্থিতি শুধুমাত্র ক্ষমতাসীনদের নয়, প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ব্যর্থতাকেও স্পষ্ট করে।
জনপ্রশাসন সংস্কারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, প্রশাসনকে বিকেন্দ্রীকরণ করা এবং মেধা ও দক্ষতার ভিত্তিতে পদোন্নতির ব্যবস্থা চালু করা। বর্তমানে প্রশাসন ক্যাডার থেকে অন্যান্য বিভাগে ডেপুটেশন দেওয়া বন্ধ করতে হবে, যাতে প্রত্যেক বিভাগ নিজস্ব বিশেষজ্ঞ দ্বারা পরিচালিত হতে পারে। পাশাপাশি, সরকারের বিভিন্ন কাজের নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ, প্রযুক্তিনির্ভর কার্যক্রম, এবং বেসরকারি খাত থেকে মাঝের স্তরে নিয়োগের মাধ্যমে স্থবিরতা দূর করা সম্ভব। কর্মদক্ষতার ঘাটতি বা দুর্নীতির অভিযোগের ভিত্তিতে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা সহজ করতে হবে।
অবশেষে, প্রশাসন সংস্কারের প্রস্তাবনার বিরুদ্ধে একজোট হয়ে দাঁড়ানোর প্রবণতা দেখিয়েছে যে, তাঁরা নিজেরাই পরিবর্তন চান না। এই বাধা অতিক্রম করতে না পারলে ভবিষ্যতে স্বৈরাচারী সরকারের পক্ষে কাজ করার আশঙ্কা থেকেই যাবে। প্রশাসনকে জনগণের কল্যাণে নিবেদিত করতে হলে দলীয়করণ থেকে মুক্ত রাখা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং সংস্কারের পথে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।